সালেহ্ বিপ্লব, আনিস তপন, মাজহার মিচেল: [৩] সফররত যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও বেসামরিক নিরাপত্তা বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। 

[৪] বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা সবসময়ই দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে লড়াই করেছি এবং ইতোমধ্যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করেছি। 

[৫] উজরা জেয়া বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকারকে সহায়তা করতে তার দেশ নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে।

[৬] তিনি বলেন, কোনো দলের প্রতি আমাদের কোনো পক্ষপাতিত্ব নেই। আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।

[৭] শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু পরিবার ও আওয়ামী লীগ জনগণের অধিকারের জন্যে সবসময়ই লড়াই করেছে। তিনি নিজেও ছাত্রজীবন থেকে লড়াইয়ে অংশ নিয়েছেন। 

[৮] তিনি বলেন, আমরা সবসময়ই জনগণের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকারের জন্যে লড়াই করেছি। বিএনপিই দেশে ভোট কারচুপি শুরু করেছিল, যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তন করেছে। আর বিএনপি দেশে ভোটচুরির সংস্কৃতি চালু করেছে। 

[৯] মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেছেন, তিনি ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন এবং তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যূত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে সমন্বিত আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদার করার ওপর জোর দেন।

[১০] শ্রম ইস্যু নিয়ে কথা বলার সময় উজরা জেয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র শ্রম সংস্কার উদ্যোগে বাংলাদেশের সাথে একত্রে কাজ করবে। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, শ্রমিকদের মজুরি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে তিনি ব্যক্তিগতভাবে শিল্প মালিকদের উদ্বুদ্ধ করেছেন।

[১৩] প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর উজরা জেয়া সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করেন। 

[১৪] বৈঠকের পর মন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা এখানে কোন ব্যক্তি বা রাজনৈতিক দলকে উৎসাহিত বা সমর্থন করতে আসেননি, এমনটিই জানিয়েছেন।  বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, সহিংসতামুক্ত ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় তারা। এর বাইরে আর কিছু আলাপ হয়নি। মার্কিন প্রতিনিধি দল বুধবার রাজধানীতে বড় দুই দলের সহাবস্থানের প্রশংসা করেছেন। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। 

[১১] এরপর আইন মন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে বৈঠক করে উজরা জেয়া। 

[১২] আইনমন্ত্রী বলেন, আমরা তাদের জানিয়েছি, সেপ্টেম্বরের মধ্যেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংশোধন করা হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে তারাও জিজ্ঞেস করেননি, আমারও বলার প্রয়োজন হয়নি।

[১৩] তিনি বলেন,সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের আইনটি নিয়ে কথা বলেছি। আমি এটিও বলেছি, গত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশে এমন আইন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার এ আইন করেছে। উপমহাদেশের অন্য কোনো দেশে এ আইন নেই। 

[১৪] এছাড়া আইনমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে গাজীপুরের শ্রমিক নেতা শহিদুল ইসলাম হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছে বাংলাদেশ সফররত মার্কিন প্রতিনিধি দল। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আমি তাদের অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে বলেছি, বাংলাদেশে আগের সংস্কৃতি নাই যে, বিচার হবে না। বাংলাদেশে এখন যে কোনো অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচার হয় এবং তাই হবে। 

[১৫] স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উজরা জেয়া। 

[১৬] বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে উজরা জেয়া বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চায় যুক্তরাষ্ট্র। তবে যুক্তরাষ্ট্র কোনভাবেই এতে নাক গলাবে না।

[১৭] তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাবে।

[১৮] তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আমাদেরকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন। 

[১৯] তিনি বলেন, বুধবার বাংলাদেশে দুই রাজনৈতিক দল যে র‌্যালি ও সমাবেশ করেছে সেটা আমরা পর্যবেক্ষণ করেছি এবং সেখানে কোনো সংহিসতার ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা ভালো অনুশীলন এবং আমরা এটার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই। 

[২০] উজরা বলেন, বাংলাদেশে কখন নির্বাচন হবে সেটা বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা চাই, সাংবাদিকরা ভয়ভীতির ঊর্ধ্বে থেকে অবাধে সংবাদ প্রচার করতে পারে।

[২১] তিনি বলেন, বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা বাংলাদেশকে সহযোগিতা করে যাব। মানবাধিকারসহ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের অংশীদার হিসেবে আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করব। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা এবং সমাবেশ যেন অবাধে করা যায়, সেটাই আমাদের চাওয়া। সুশীল সমাজ যেন অবাধে কথা বলতে পারে সেটা আমরা চাই।

[২২] যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে এমন একটি কথা প্রচার হচ্ছে। এ বিষয়ে উজরার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এখানে এসেছি, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ককে আরও গভীর করতে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করতে চায়। অবাধ ও সহনশীল ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে কীভাবে আরও সুরক্ষিত ও সমৃদ্ধশালী করা যায়, সে বিষয়ে আলোচনা করতে এসেছি।

[২৩] রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে বর্তমান পরিস্থিতি অনুকূলে নয় বলে মত প্রকাশ করে উজরা বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন যেন স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদাপূর্ণ হয়, সেটাকে আমরা সমর্থন করি।

[২৪] পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানান, তিনি র‌্যাবের ওপর দেওয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন। 

[২৫] উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধি দলটি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসভবনে নৈশভোজে অংশ নেয়। 

[২৬] আন্ডার সেক্রেটারি উজরার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু এবং ইউএসএইডের এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেটর অঞ্জলী কৌর। সম্পাদনা: এল আর বাদল